বাংলায় রামায়ণ অনুবাদে মহাকবি কৃত্তিবাস ওঝার কীর্তি চিরস্মরণীয়। বাংলা রামায়ণের অন্য কবিদের পাশে কৃত্তিবাসের নিজস্বতা ও কোনও কোনও ক্ষেত্রে মৌলিকতা লক্ষ্যণীয়। তাঁর প্রয়াসটি ‘কৃত্তিবাসী রামায়ণ’ হিসেবে খ্যাত। অমিয়শঙ্কর চৌধুরী মহাকবি কৃত্তিবাসের জন্মতারিখ, পুথি ইত্যাদি নিয়ে প্রবল আগ্রহী এক গবেষক। তাঁর ‘কৃত্তিবাস ও বাংলা রামায়ণ’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে আটটি অসামান্য প্রবন্ধ। টেরাকোটায় কৃত্তিবাসের প্রভাব বা কৃত্তিবাসের জীবনে ব্রাহ্মণ্য আদর্শের প্রভাব লেখকের অনুসন্ধানের বিষয়। গভীর নিষ্ঠায় প্রমাণ করতে চেয়েছেন শ্রীনাথ আচার্য চূড়ামণি ছিলেন কৃত্তিবাসের অন্যতম শিক্ষাগুরু। বিভিন্ন সম্পাদকবৃন্দ কতবার কতরকমভাবে কৃত্তিবাসী রামায়ণ সংশোধন করেছেন, তারও তথ্য তিনি তুলে দিয়েছেন পাঠকের হাতে। কৃত্তিবাসের প্রতি বিদ্যাসাগরের শ্রদ্ধার্ঘ্য যেমন তাঁর আলোচ্য, তেমনই শ্রীরামকৃষ্ণ কর্তৃক অনুলিখিত রামায়ণের পালাগুলির বিস্তৃত পরিচয়ও তিনি পেশ করেছেন। বাংলা রামায়ণের নিম্নবর্গীয় কবিদের ভাবনার বিশেষত্ব বিশ্লেষণের পাশেই আছে কৃত্তিবাসের জন্মভিটায় কবির বাৎসরিক স্মৃতিবাসরের ইতিহাস। কৃত্তিবাস নিয়ে চিন্তাশীল লেখকের এই গ্রন্থটিও একটি কীর্তি নিঃসন্দেহে।