সমুদ্রে মিশবার আগে আরও ছ’টা নদীর মিলিত স্রোত নিয়ে আগুনমুখা ভয়ংকর। উত্তাল জলরাশির মাঝে মাঝে প্রাকৃতিক নিয়মে গড়ে উঠেছে কত না চর, যেখানে বারবার হানা দেয় বিধ্বংসী ঝড় আর বন্যা। বাংলাদেশের আগুনমুখা নদীপাড়ের এক সাধারণ ঘরের মেয়ে কী বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে শেষ পর্যন্ত ওয়াশিংটনের পটোমাক নদীর পাড়ে তার জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় কাটিয়ে দিল, নূরজাহান বোসের ‘আগুনমুখার মেয়ে’ গ্রন্থে আছে সেই বিস্ময়কর আত্ম-কাহিনি। লেখিকার এই স্মৃতিকথায় উঠে এসেছে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের প্রগতিশীল আন্দোলনের নানা কথা, সংস্কারগ্রস্ত সমাজের সত্য বিবরণ, মুক্তিযুদ্ধের সময়কার দমবন্ধ-করা দিনগুলির জীবন্ত চিত্র। তবে সমস্ত ছাপিয়ে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অদম্য মনোবলে ভরা একটি মেয়ের জীবনযুদ্ধের তীব্রতা, বাল্যকালেই এক দুরন্ত নদী যাকে দীক্ষা দিয়েছে জীবনের। প্রতিকূল পরিবেশে জন্ম, দুর্ভাগ্য হানা দিয়েছে, পিছিয়ে-পড়া সমাজে অবিচার নিত্যসঙ্গী, কিন্তু কিছুতেই হারেনি ‘আগুনমুখার মেয়ে’। অনুভবী গদ্যে পাঠকের জন্য নিবেদিত হয়েছে এক-জীবনের সেই অভিজ্ঞতা।