অনুবাদসহ সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও বাংলা সাহিত্যে আবদুল হকের প্রধান পরিচিতি প্রাবন্ধিক হিসেবে। বাংলাদেশের প্রবন্ধ-সাহিত্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখক তিনি। বাংলাদেশের চিন্তাচর্চায় তাঁর ভূমিকা অসামান্য। ভাষা আন্দোলনের পথিকৃৎ এই মনীষী স্বৈরতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক পূর্ব পাকিস্তানের নয়া ঔপনিবেশিক পরিমণ্ডলে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পালন করেন নির্ভীক লড়াকু সৈনিকের সাহসী ভূমিকা।
দ্বিজাতিতত্ত্বের চিন্তাকে ভুল প্রমাণ করে তিনি বাঙালি মুসলমানের ‘বাঙালি’ জাতিসত্তাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ‘বাংলাদেশ’ নামকরণের যৌক্তিকতা প্রথম তুলে ধরেন আবদুল হক তাঁর প্রবন্ধে।
তিনি নিরাসক্ত যুক্তিবাদী দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করেছেন শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিসহ দেশ ও জাতির গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ পর্বে রচিত তাঁর সাতটি প্রবন্ধগ্রন্থ থেকে বাছাই করা ৪৭টি প্রবন্ধ নিয়ে সাজানো হয়েছে এ সংকলন। এখানে আবদুল হকের মৌলিক চিন্তার প্রকাশকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিজীবনে আপাদমস্তক সৎ আবদুল হক ছিলেন দর্শনচেতনায় বস্তুবাদী আর রাজনৈতিক চেতনায় সাম্যবাদী।
স্বদেশ ও জাতির সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল প্রতিষ্ঠাই ছিল এই মানবতাবাদী চিন্তাবিদের চিন্তাচর্চার প্রধান অনুপ্রেরণা।