চিন্তাবিদ ও সমাজসচেতন বাল্মীকি টের পেয়েছিলেন যে আর্যদের ধর্মানুষঙ্গ ও গোঁড়া পৌরোহিত্য ক্ষতি করছে সমাজের। তিনি বুঝেছিলেন প্রয়োজন এক ক্ষত্রিয়-শ্রেষ্ঠর, যিনি শাস্ত্রজ্ঞানে পুরোহিতদের সমকক্ষ, অস্ত্রবিদ্যায় সেরা ও প্রজাকল্যাণে নিবেদিত। আদিবাসীদের আরণ্যক প্রজ্ঞা ও স্বচ্ছতা রামচন্দ্রের চরিত্রে আরোপ করলেন আদিকবি। রামের গায়ের রঙ আর্যদের মতো নয়। তিনি আদিবাসীদের মতো সহনশীল ও কষ্টসহিষ্ণু। তারা, অহল্যা, সুগ্রীব, বালী, হনুমান প্রমুখ বিশিষ্ট আদিবাসী চরিত্রদের থেকে রাম ক্রমাগত শিখেছেন যাপন। ধূর্জটিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের ‘রামায়ণ: প্রকৃতি, পর্যাবরণ ও সমাজ’ সম্পূর্ণ নতুন চিন্তার আলোয় রচিত। লেখক দেখিয়েছেন, আদিবাসী বা মূলনিবাসী সংস্কৃতি ও পরম্পরায় মুগ্ধ বাল্মীকি কীভাবে তাঁর নায়ক রামচন্দ্রকে বৃহত্তর সমাজস্বার্থে নির্মাণ করেছেন। পাশাপাশি এই গ্রন্থে আছে রামায়ণের প্রতিটি কাণ্ডের উদ্ভিদ, প্রাণী, চরিত্র, অস্ত্রাদি, পেশা, ব্যবহৃত সামগ্রীর কথা ও তৎকালীন মানচিত্র। নিঃসন্দেহে একটি বিরল প্রকাশনা।