মোগল ইতিহাস বরাবরই আমাকে আন্দোলিত করতো এবং এখনো করে। কখনো কখনো তাদের নিয়ে গর্ব করতাম। আবার কখনো বা দুঃখ পেতাম। ব্যক্তিগত জানার আগ্রহ থেকে প্রথমে একটি বই লিখে ফেলি। নাম দেই মোগল সাম্রাজ্যের সোনালী অধ্যায়। বইটির নামকরণ থেকেই বুঝা যায় যে, এতে শুধু মোগল ইতিহাসের সুখের দিনগুলো স্থান পেয়েছে। আমি ইচ্ছে করেই মোগল সাম্রাজ্যের বেদনাদায়ক অধ্যায় এড়িয়ে গেছি। ভেবেছিলাম যা লিখেছি তাই যথেষ্ট। আর না লিখলেও চলবে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রকাশক ও পাঠকদের অনুরোধে এ বইটি লিখায় হাত দেই। বইটি লিখতে শুরু করে টের পাই যে, আমার সামনে সমুদ্র। মনে সাহস সঞ্চয় করে লিখতে শুরু করি। নাম দিয়েছি মোগল সাম্রাজ্যের পতন। মোগল সাম্রাজ্যের সোনালী অধ্যায় লিখতে গিয়ে যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি, মোগল সাম্রাজ্যের পতন লিখতে গিয়েও হুবহু একই সমস্যার মুখোমুখি হই। সূত্র ছাড়া বই লিখা সম্ভব নয়। সমসাময়িক অথবা পরবর্তীকালে প্রকাশিত বই হচ্ছে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। বইয়ের কোনো জাত নেই। কিন্তু ভারতের ইতিহাস বিষয়ক কোনো কোনো বইয়ের স্বাদ ও ঘ্রাণ নেয়া হলে স্পষ্ট লেখকের ধর্মীয় পক্ষপাতিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। স্যার যদুনাথ সরকারের মতো ঐতিহাসিকগণও এ চক্র থেকে বের হতে পারেননি। ভারতে জন্মগ্রহণ এবং শত শত বছর ভারতে বসবাস করা সত্ত্বেও যদুনাথ সরকারের ভাষায় মোগলরা বিদেশি। মোগলরা বিদেশি হলে আমাদের পরিচয় দাঁড়ায় কি? ভারতীয়দের ভাষায় আমরাও বিদেশি। এজন্য বিজেপি শ্লোগান দেয় : বাবর কা আওলাদ কা বাহার করো, মন্দির কা নির্মাণ করো। যে জাতি কালা পানি আখ্যা দিয়ে সমুদ্র পাড়ি দেয়াকে জাত যাওয়া বলে মনে করতো তাদের পক্ষে মোগলদের বিদেশি বলাই স্বাভাবিক। ভারতীয় ঐতিহাসিকরা স্বীকৃতি না দিলেও ব্রিটিশ ঐতিহাসিক এইচভি হাডসন তার গ্রেট ডিভাইড শিরোনামে গ্রন্থে মোগলদের ভারতীয় হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। হাডসন তার আলোচ্য বইয়ের ৯ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেছেন : : Later Muslim conquerors became absorbed by the land they ruled and Akber the Great was as much as Indian as Pandit Nehru. অর্থাৎ পরবর্তীকালের মুসলিম বিজেতাগণ তাদের শাসনাধীন ভূখণ্ডে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন এবং মহান আকবর ছিলেন পণ্ডিত নেহরুর মতো ভারতীয়।