বঙ্গদেশে জন্ম নিলে কোনো বাঙালি সন্তানেরই রবীন্দ্রনাথ বা নজরুল, বা এ পর্যায়ের কারো নাম জানার জন্যে খুব একটা যোগ্যতা অর্জন করতে হয় না। কিন্তু যারা শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষা নিয়ে আর সমাজের সঙ্গে সংস্কৃতি ও যুগের সঙ্গে যুগধর্ম বুঝে এগিয়ে যান, তারা রবীন্দ্র-নজরুল পেরিয়ে অন্য আরো শ্রেষ্ঠ বাঙালির পরিচয় জানতে পারেন; উপলব্ধি করতে পারেন তাদের ত্যাগ, সাধনা, চিন্তা ও কাজের গুরুত্ব। এ বই সেই জাতি সংগঠকদের ত্যাগ, সাধনা, কাজ ও চিন্তাকে নিয়ে রচিত। এই চিন্তকেরা সমাজকে যেই যুক্তি-বুদ্ধি-বস্তু ও মানবতার দিকে পরিচালিত করতে চেয়েছিলেন, যা বর্তমান সমাজের দিকে তাকিয়ে মনে হয় সে-সব ব্যর্থ হয়েছে, মুক্তচিন্তার বিস্তার গ্রন্থে লেখক তাদের সেই জ্বেলে যাওয়া আলোর সন্ধান করেছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন কোনো-একটা জাতির দুর্বল মুহূর্তের নৈতিক বিভ্রান্তি তার সবটুকু নয়। জাতীয় জীবনের দীর্ঘ পথ চলায় তাই আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে নতুন আলোর পথযাত্রীদের পরিচয় উন্মােচন করতে হবে আমাদের। বর্তমান গ্রন্থে লেখক সেই জ্যোতির্ময় আলোর সন্ধানে প্রয়াসী। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আমাদের চিন্তারাজ্য আজ বন্ধ্যায়। সেখানে কেউ যখন কোনো প্রসিদ্ধ চিন্তকের চিন্তা বা কাজ নিয়ে বিশে- যা আলোচনা করেন, সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হয় ওঠে ধারাভাষ্যের মতো। এসব ধারাভাষ্যতুল্য লেখার মধ্যে লেখকের নিজের চিন্তা বা সত্তা বলতে তেমন কিছুই থাকে না। মুক্তচিন্তার বিস্তার এর বিশেষ ব্যতিক্রম। এই গ্রন্থে শুধু বিশ্লেষণের নতুনত্বই ফুটে ওঠেনি, এতে লেখক মুহম্মদ সাইফুল ইসলামের মনন ও চিন্তার মৌলিকত্বের নানা দিকও স্পষ্ট হয়েছে। এমন বিবেচনায় বলা যায়, এই গ্রন্থ বিগত দুই শতকের বাঙালি মনীষার সঙ্গে একবিংশ শতকের চিন্তার এক সমান্তরাল সম্মিলন।
রাখাল রাহা