নানা ধর্ম-সম্প্রদায়ের সমবায়ে গঠিত এদেশের সামাজিক বৈশিষ্ট্য হল এর অসাম্প্রদায়িক মানবতা। আমাদের সংস্কৃতি আবহমানকাল ধরে এই সমন্বয়ী ধারায়ই পুষ্ট ও বিকশিত হয়ে আসছে। অবশ্য আমাদের লোকসাহিত্যের ক্ষেত্রে কথাটা যেমন প্রায় শতভাগ সত্যি নাগরিক সাহিত্যের বেলায় তা হয়তো নয়। পরাধীন আমলে, ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর আওতায়, আমাদের লেখক-সাহিত্যিকদের কারো কারো মধ্যে ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য চেতনা প্রবল হয়ে ওঠে; যদিও তার পেছনে নানা কার্যকারণ, বিভিন্ন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ভূমিকা ছিল। তারপরও কখনোই তা আমাদের সংস্কৃতির মূল সুর হয়ে ওঠেনি। এ কথা ঠিক যে আমাদের লেখকদের অধিকাংশই ১৯৪৭-এ দেশভাগ ও সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করেছিলেন। এ ব্যাপারে তাঁদের অনেকেই বলা যায় এক ধরনের সদিচ্ছাপূর্ণ ভ্রান্তির শিকার হয়েছিলেন। দেশভাগকেই তাঁরা সেদিন উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িক সমস্যার অবিকল্প সমাধান, সংঘাতপূর্ণ পরিবেশ থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় বলে মনে করেছিলেন। বিভাগোত্তর উভয় দেশের অভিজ্ঞতা থেকে সে ভ্রান্তি কাটতে তাঁদের অবশ্য সময় লাগেনি। এমন কি পাকিস্তান সৃষ্টির পর প্রথম দিনগুলোতেও তাঁরা নতুন দেশটিকে একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে দেখার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন।