বর্তমান বিশ্বের যুবসমাজ যেন দিকভ্রান্ত। ফলে জাতি হচ্ছে দিন দিন মেরুদণ্ডহীন। অসহায় যুবকদের সম্মুখে কোন আদর্শ নেই যা তাদের পথ চলায় পাথেয় হিসেবে ধরা যায়। এহেন ঘাের অন্ধকারে আলােকবর্তিকার মশাল নিয়ে যিনি এগিয়ে এসেছেন তিনি হলেন যুগনায়ক স্বামী বিবেকানন্দ। উপমহাদেশের মানুষ যখন একদিকে দারিদ্র্য, অশিক্ষা, পরাধীনতা ও আর্থসামাজিক অস্থিরতা দ্বারা নিপীড়িত আর অন্যদিকে ধর্মীয় গোঁড়ামি, নৈতিক দীনতা ও আত্মিক জড়তায় আচ্ছন্ন, তখন বিপুল জনগােষ্ঠীর সার্বিক মুক্তির জন্য সংস্কার অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। রাজা রামমােহন রায় যে সংস্কার কর্মের শুভ সূচনা করেছিলেন এবং মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অক্ষয় কুমার দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখের চিন্তা ও কর্মের সংস্পর্শে অগ্রবর্তী হয়েছিল, সেই সংস্কারেরই যুগােপযােগী এক নতুন বার্তা তথা এক নতুন জীবনাদর্শ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন প্রকৃত মানবতার উদগাতা স্বামী বিবেকানন্দ। স্বামী বিবেকানন্দ অন্যান্যদের মতাে অহৈতুকী, অতীন্দ্রিয় প্রেম (যার লক্ষ্যবস্তু যতটুকু না ছিল মাটির মানুষ তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল অমৃত লােকের দেবদেবী) সাধনার পরামর্শ দেননি। স্বামী বিবেকানন্দের প্রচারিত প্রেম ছিল যথার্থই এমন মানব-কেন্দ্রিক প্রেম যা মানুষের মধ্যে খুঁজে পায় তার সৃষ্টিকর্তাকে। তার বহুল প্রচারিত এই বাণীটি তাই আজ কোনাে বিশেষ ধর্মের বাণী নয়, মানব ধর্মের অন্যতম স্তবক।