কেবল মহাবিশ্বে নয়, মহাসাগরেও মূলস্রোত থেকে পথভ্রষ্ট হয়ে সৃষ্টি হয় কৃষ্ণগহবরের প্রকৃতির মতাে উত্তাল আর ঘােলাটে জলধারার ঘূর্ণিস্রোত । পথভ্রষ্ট এই স্রোত ধীরে ধীরে মূলস্রোত বরাবর পাক খেতে শুরু করে। পাক খাওয়া এই শীতল স্রোতে ক্রমশ মিশে যায় উষ্ণ স্রোত । জীবনেও ঘটতে পারে এমনিতর বৈশ্বিক ক্রীড়াচক্রের খেলা। একদম ভিন্ন ধরনের ব্যক্তিত্বের অধিকারিণী একগুঁয়ে আর প্রচণ্ড জিদ্দি অথচ আত্মবিশ্বাসী ঈপ্সিতা বুকের কন্দরে লুকিয়ে থাকা শৈশবে রােপিত বীজ থেকে বিকশিত পত্রপল্লব এবং পিতৃত্বের শেকড়ের টানে দ্বিধা করে না ভয়াবহ ঝুঁকি গ্রহণে-সংক্ষুব্ধ সময়ে চলাফেরায় কিংবা গুপ্তঘাতকের মতাে সাধারণের মধ্যে মিশে থাকা মুখােশপরা অপরাধীচক্রের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ার ভয়ে ভীত না হয়ে সতত সত্যের টানে ছুটতে থাকে অচিনপুরের উদ্দেশ্যে। তার বিবেচনায় পথটি মসৃণ হলেও মূলত সে ছুটে গেছে কণ্টকিত জটিল পথে । যখন টের পেল এই সত্য, ততক্ষণে বিস্ময় নিয়ে দেখল পথভ্রষ্ট নতুন জীবনস্রোত, আশ্চর্য এক বীজের অঙ্কুরােদগম । জীবনপ্রকৃতিতে পল্লবিত সেই নতুন বীজ উপড়ে ফেলতে পারে না সে। মাতৃত্বের প্রবল টানে তাকে যুক্ত করে রাখে আপন বলয়ের মায়াকেন্দ্রের সঙ্গে। সুদূর বাংলাদেশ থেকে এই উপন্যাসের প্রেক্ষা হয়েছে মালয়েশিয়ার সর্বদক্ষিণের ভূমি জোহর বারুই-এশিয়ার দক্ষিণের শেষবিন্দু তানজুং পিয়াই পর্যন্ত। মাঝখান থেকে উঠে এসেছে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের কাহিনি, পাসপাের্ট হাতছাড়া হওয়ায় বেআইনি হয়ে-পড়া বাংলাদেশের তরুণদের মানবেতর জীবনযাপন, বন্দিত্ব আর সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে যাওয়া। আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালানসহ দেশের চলমান সময় । পথভ্রষ্ট ঘূর্ণির কৃষ্ণগহবর’ উপন্যাসটি বাংলা কথাসাহিত্যে কালােত্তীর্ণ দলিল হিসেবে সংযােজিত হবে, নিঃসন্দেহে এ আশা করা যায় । দেশকালের সীমানা ছাড়িয়ে ব্যাতিক্রমধর্মী এই চিরায়ত কথাসাহিত্যের প্রবাহমান টান নতুন জীবনবােধে পাঠকমন ঋদ্ধ করবে বলেই বিশ্বাস ।