উনিশ' বিরাশি সাল। তখন রাশিয়ায় চলছে লিওনিদ ব্রেজনেভের স্থবির শাসন আর সোভিয়েতবাসীরা পার করছে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে ধূসরতম অধ্যায়। চারপাশে চলছে কমিউনিজম আর মার্কসবাদ নামের এক ধূমাভ দুর্বোধ্য রোমান্টিকতা। সুবর্নময় এই দেশটি তখন রঙিন চাঁদোয়ার নিচে বিবর্ণ ফ্যাকাসে মরুভূমি। বাইরে থেকে যা শোনা যায়, উপর থেকে যা দেখা যায়, ভেতরে কিন্তু তা নয়। সর্বত্র চলছে কী করে সবচেয়ে কম খরচে ভালো জিনিস খেয়ে, সবচেয়ে কম পরে, সবচেয়ে কম উপভোগ করে, সবচেয়ে কম কথা বলে, সবচেয়ে কম স্বাধীনতা ভোগ করে, জীবনের যাবতীয় আড়ম্বর আর বাহুল্য পরিহার করে কী করে ভালো থাকা যায়, তার প্রতিযোগিতা। মস্কো কিংবা লেনিনগ্রাদের রাস্তায় রোবটের মতো ঘুরে বেড়ানো মানুষগুলোর মুখের দিকে তাকালে মনে হয়, এরা তাদের মনের অতলে নিূগূঢ় কোনো রহস্য লুকিয়ে রেখেছে সযতনে। অযুত নিযুত অনুজ্জ্বল অস্বচ্ছ চোখের ভিড়ে বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকে শুধু কেজিবি'র গোয়েন্দারা, অন্যদের সন্দেহ করা ছাড়া যাদের দ্বিতীয় কোনো কাজ নেই। তারপরও এখানে জীবন থেমে থাকেনি। এখানে জীবন আছে কিন্তু যাপন নেই। কমিউনিজম যেন এদেশের মানুষের জীবনের অনুষঙ্গ, আর ক্রেমলিন তাদের অলৌকিক বাতিঘর। কেউ এ নীতিকে ধারণ করে প্রগাঢ় শ্রদ্ধায়, আবার কেউ একে এড়িয়ে চলে সূক্ষ্ণ সতর্কতায়। কিন্তু কেউই এ নীতিকে উপো করে না। একে উপো করা যেন মহাপাপ। গরিবের দুঃখের জন্য অহেতুক নিজেদের দায়ী করে এরা কমিউনিজমকে দেশপ্রেমের সঙ্গে একত্র করে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে।