আন্তর্জাতিক খ্যাতির অধিকারী প্রবীণতম বাঙালি লেখক শ্রীনীরদচন্দ্র চৌধুরী বাংলা ভাষায় এ-যাবৎ যা লিখেছেন, তা নির্দ্বিধায় পাঠক মেনে নেয়নি। কখনও প্রসন্ন, কখনও অপ্রসন্ন চিত্তের দোলাচলে উদ্বেলিত হয়েছে পাঠককুল। চিরমেধাবী, প্রবল আত্মপ্রত্যয়ী ও আজীবন অনমনীয় নীরদচন্দ্র পাঠকদের এই অনুরাগ ও বীতরাগের মধ্যেই ভাস্বর হয়ে আছেন আপন গরিমায়। এই সংকলনে সংগৃহীত তাঁর লেখাগুলি পাঠ করলে এ-কথা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, ১৯২৮-এ প্রকাশিত প্রথম প্রবন্ধটি থেকে ১৯৯৪-এ লিখিত রচনাটি পর্যন্ত তিনি সমান সজাগ, প্রাণবন্ত। শুধু বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যেই নয়, আমাদের দেশের সাহিত্য, সমাজ, রাজনীতি ও সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারা সম্পর্কে তাঁর আশ্চর্য মননশক্তি ও প্রখর বিচারবুদ্ধি প্রতিফলিত হয়েছে এই সব বিশ্লেষণধর্মী রচনায়। ইংরেজি শিক্ষা, ভাষা ও সাহিত্যের সংস্পর্শে এসে ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক জীবনে বাঙালির যে-প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সে-কথা যেমন তিনি বলেছেন, তেমনই বর্তমান শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক থেকে বাঙালির জীবনের সর্বস্তরে যে-অবক্ষয় শুরু হয়, তার গতি-প্রকৃতিও বিচার করেছেন। শতজীবী এই লেখকের তীক্ষ্ণ মন্তব্য আমাদের অনেক সময়েই সচকিত করেছে; কখনও বা প্রতিকূল সমালোচনাও হয়েছে। কিন্তু কোনও দিনই নীরদচন্দ্র নিজের বিশ্বাস ও স্বধর্ম থেকে বিচ্যুত হননি। সযত্নে সংকলিত ও স্থানবিশেষে সচিত্র, এই বিষয়নির্ভর প্রবন্ধগুলিতে চিরন্তন সত্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লেখকের অভিজ্ঞতা, গভীর প্রত্যয়, পাণ্ডিত্যের ব্যাপ্তি আর সূক্ষ্ম পরিহাসপ্রিয়তা। তাঁর পছন্দ-অপছন্দের তীব্র আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে বাংলা ও বাঙালি।