এক-একজন কবি থাকেন, যাঁরা সমসময় থেকে একটু আলাদা, যেন-বা বিচ্ছিন্ন। স্বভাব-লজ্জার কারণে তিনি বসে থাকেন একটু দূরে। সমকালে ভিড় ঠেলে সামনে আসতে পারেননি, ঈষৎ আবছা, অথচ তাঁর আছে আজীবনের নির্জন, একক কাব্যচর্চা। পঞ্চাশের কবি সুনীল বসু এমনই একজন। সভা-সমিতি, ভিড় পরিহার করে চলতেন। লিখতেন কম। ছিলেন স্বল্পভাষী ও লাজুক। আত্মভোলা, প্রেমিক এই কবি-র শব্দসাধনা সম্পূর্ণ নিজস্ব। মাত্র আঠারো বছর বয়সে প্রকাশিত প্রথম কবিতা-পুস্তিকা ‘সিন্ধুসারস’-এ তাঁর ছন্দস্ফুর্তি, ভাষাসংযম বলে দেয়, তখনই তিনি প্রস্তুত। ‘তিমির তরংগ’ কাব্যগ্রন্থে আছে কবিতা-কাতর আত্মা, যেখানে ‘থরথর কাপে অশ্রুর নীল চুমকি’| এর পনেরো বছর পরে প্রকাশিত ‘কখনো দস্যু কখনো প্রেমিক’ থেকে শেষ কাব্যগ্রন্থ ‘নক্ষত্রের সাইকেলে অনন্ত ব্রহ্মে’ পর্যন্ত কবি সুনীল বসুর যে উড়ান, তা মৌলিক, স্বাতন্ত্রচিহ্নিত, আত্মকৌতুকে ভরপুর। তাঁর অন্তরাত্মা কামনা করে প্রেম, তিনি কামনা করেন ‘পিপীলিকা’র মতো তুচ্ছ বেঁচে থাকা। চাপা বিষাদে রহস্যময় হয়ে ওঠে তাঁর বিদ্রুপ।সুনীল বসুর ছ’টি কাব্যগ্রন্থ ও অগ্রন্থিত কিছু কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হল ‘কবিতাসংগ্রহ’। কবিতাপ্রেমিকদের জন্য নিশ্চিত এক আনন্দ-উপহার।