‘অনেক কবিতা লিখে চ’লে যায় যুবকের দল’। এ ভাবেই শুরু হয়েছিল এই সংকলনের নাম-প্রবন্ধ। প্রথম বাক্যে প্রথম যে তীব্র তিরস্কার নিহিত, প্রবন্ধের অবয়বে তা প্রবল হয়ে উঠল তীক্ষ্ণ অভিযোগে: ‘কবিতায় আমি আর বাংলাদেশকে খুঁজে পাই না’, কারণ কবিরা এখন সমাজ-বিযুক্ত, ‘আমার-তোমার শব্দগুলি নিয়ে তাঁরা শৌখিন জলবিহারে চ’লে যান, যেন সমাজের কাছে তাঁদের দায়িত্ব নেই...’। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দর্পণে বিশ্বদর্শনের আত্মরতি চরম ঘৃণার যোগ্য, এটাই এই প্রবন্ধের মর্মকথা। এই সংকলনেরও। ১৯৫৭ থেকে ১৯৭৪, প্রায় দু’দশকের পরিসরে লেখা ষোলোটি উজ্জ্বল প্রবন্ধে সামাজিক মানুষের সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার কলঙ্ককাহিনী। যাঁরা সমাজ বদলানোর কথা বলেন, তাঁরাও অসার শব্দক্রীড়ায় এবং নিরুদ্দেশ পণ্ডিতিতে মগ্ন হয়েছেন (‘কবিতা বাদ দিয়ে মার্ক্স’)। সাহিত্য বিষয়ক একাধিক আলোচনায় এই সমাজবোধই নির্ভুল কষ্টিপাথর। পাশাপাশি আছে ঘনিয়ে ওঠা দুর্দিনের বিচার, যথা ১৯৭২ সালে লেখা ‘আদ্যাশক্তিমহাশক্তিকালিকাকাহিনী’। আর, এই সংকলনের পরতে পরতে ক্রমাগত ফিরে আসে আত্মসমীক্ষা, যে সমীক্ষা নির্মম হয়ে বলতে পারে, ‘... বিশ্বাসঘাতকতায় আমার জুড়ি নেই, আজ মিছিলে আছি, কাল হয়তো এই মিছিলের উপরই কামান দাগবো, চেতনার ঋণ পরিশোধ করবো’। আত্মনিন্দার বিলাসে সমীক্ষা শেষ হয় না, পরমুহূর্তেই শোনা যায়, ‘তবু মিছিলে, এই আশায় যে আমার চেতনা বংশানুক্রমে পবিত্র থেকে পবিত্রতর হবে, একদিন আমার চেতনা ভুলবে তার মধ্যবিত্ত শ্রেণীস্বার্থ কলুষকরা ঐতিহ্য’। বাঙালির সমাজবিযুক্তি বহুগুণ বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তার আত্মরতি। তাই প্রথম প্রকাশের প্রায় তিন দশক পরে এই সংকলন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক।