চেতনায় বিশ্বনাগরিক বিষ্ণু দে শতবর্ষ পার করেও বাংলা কবিতার ভুবনে আজও প্রভাবশালী। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘উর্বশী ও আর্টেমিস’-এ ‘শফরী চোখের সরল চাহনি’ দিয়ে তাঁর যে কবিতা-অভিযাত্রার শুরু, অনেকানেক বিচিত্র বাঁক পেরিয়ে তা শেষ কাব্যগ্রন্থ ‘আমার হৃদয়ে বাঁচো’-তে পৌঁছেছে পোড়া তালগাছের পুনরুজ্জীবনের হার-না-মানা বিশ্বাসে। মধ্যবর্তী পাঁচ দশকের বেশি সময়ে কখনও তিনি উচ্চশিক্ষিত বিশেষ পাঠকগোষ্ঠীর কবি বলে অভিযুক্ত, কখনও আবার সাঁওতাল পরগনার নিসর্গ এবং সহজ-সরল সাধারণ মানুষের বন্দনাকারী। কখনও মিতবাক, শব্দ-নির্বাচনে সতর্ক; কখনও কথ্যগদ্যে কিছু-বা আবেগী। কখনও ‘তুষারতুঙ্গ চূড়ায় চূড়ায় ঘোরা...’, কখনও-বা ‘অস্পষ্ট অদৃশ্য পাতায় পাতায় শোনে তার ভাষা—এই দেশে কী করে জীবন বাঁচে কী করে বেঁচেছে এতকাল...’। দীর্ঘ, মহৎ কবিজীবনে বিষ্ণু দে প্রকৃতপক্ষে বসত করেছেন মানুষের সংগ্রামের ইতিহাসে। দ্বন্দ্বমুখর সেই ইতিহাস, আর প্রকৃত শিল্পীর মতোই তিনি জয়গান গেয়েছেন ‘কড়ি-কেনা দাসদাসী নামহীন চাষি ও মজুর’-এর। কাব্যভাষা বদলে বদলে গিয়েছে, কিন্তু বিশ্বাস তাঁর ‘অজেয়’। তিনি যে পরম বিশ্বাসে দেখেছেন ‘চৈত্রের আকাশে এক পরাক্রান্ত জীয়নকৌশলে/বিজয়ী পলাশ...’। প্রকাশিত হল বিষ্ণু দে-র ‘কবিতাসমগ্র’। কালজয়ী কবির মানস-শস্যের অপরূপ সংগ্রহ।