‘আপনার বিষয়াশ্রয়, বিন্যাসের পারিপাট্য, নির্মাণদক্ষতা, ভাষার স্বচ্ছ ও সাবলীল গতি এবং জীবনের মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস, সব কিছুকে আপনি একসঙ্গে বুনেছেন অপরিসীম নিপুণতায়। আপনার অনেক রচনাই আমি পড়েছি; বস্তুত, আমি আপনার অনেক অনুরক্ত পাঠকের অন্যতম।’... নীহাররঞ্জন রায়। লিখেছিলেন নয়াদিল্লি থেকে, ২২ এপ্রিল ’৭৭। অন্য একজন প্রখ্যাত প্রবীণ রমাপদ চৌধুরী সম্পর্কে সস্নেহ পরিহাসে লিখেছেন : ‘না লিখে লেখক’। সংখ্যার দিক থেকে বঙ্কিমচন্দ্রের চোদ্দটি উপন্যাস এবং শরৎচন্দ্রের কুড়িটি উপন্যাসের কথা ভুলে গেলে স্বীকার করতেই হয়, সত্যিই তিনি ‘না লিখে লেখক।’ কিন্তু আশ্চর্য এই, রমাপদ চৌধুরীর একটি উপন্যাসকেও উপেক্ষা করা যায় না। তাঁর কোন উপন্যাস যদি জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে থাকে (লালবাঈ), অন্য একটি পেয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সম্মান (বনপলাশির পদাবলী)। তাঁর একটি উপন্যাস যদি বয়স্কদের আসরে পেয়ে থাকে মর্যাদার আসন (বীজ), অন্য একটির সংলাপ ফিরেছে যুবকযুবতীদের মুখে মুখে (এখনই)। বলতে গেলে এমন বিষয়-বৈচিত্র্য আর কোন লেখকের রচনায় দেখা যায়নি। আর কেউ পৌঁছতে পারেননি এমন অতলস্পর্শী গভীরতায়। ‘উপন্যাসসমগ্র’-এর এই তৃতীয় খণ্ডে রয়েছে রমাপদ চৌধুরীর ছ-ছটি স্মরণীয় উপন্যাস। আছে ‘এখনই’—প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে যে-উপন্যাস রবীন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত এবং প্রকাশের এতদিন পরেও তরুণতরুণীদের কাছে সমান জনপ্রিয়। আছে ‘অভিমন্যু, যে-উপন্যাসের ভিত্তিতে তপন সিংহের সাম্প্রতিক সর্বভারতীয় চলচ্চিত্র ‘এক ডাক্তার কী মৌত্’। আছে ‘রূপ’—যেখানে ইমেজের এবং মানুষের প্রকৃত চেহারার স্বরূপ অম্বেষণ। আছে বস্তুজগতের উচ্চাশা ও সাফল্যের সোপান বেয়ে শূন্যে পৌছে যাবার কাহিনী, ‘চড়াই’। ‘শেষের সীমানা’—অসহায় মানুষের অলৌকিক-নির্ভরতার উৎসনির্ণয় যে-উপন্যাসে। এবং ‘আরো একজন’—যেখানে ত্রিকোণ প্রেমকে ছুঁয়ে আছে একটি নিপাপ বাহু।