পরাধীন ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে, উত্তরবঙ্গের পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা এক চা বাগান। খুব বেশিদিন হয়নি এ অঞ্চলের বন কেটে এবং আদি বসবাসকারী উপজাতিদের কৃষিজমি দখল করে চা বাগান পত্তন করেছে ব্রিটিশরা। মালিকানা ও শাসনের লাগাম পুরোপুরি ব্রিটিশের হাতে। বিশাল বাংলোয় রাজা-রাজড়ার মতো বসবাস করেন ব্রিটিশ মালিক এবং ম্যানেজাররা। নেপালি-আদিবাসী খিদমতগারের দল তাঁদের সেবক। স্বল্পশিক্ষিত বাঙালিবাবুরা অধিকাংশই করণিক, কয়েকজন ব্যবসায়ী। নেপালি ও আদিবাসীরা শ্রমিক। তারা কেউ স্থানীয় ভূমিজাত নয়। আড়কাঠিরা নেপাল থেকে, ছোটনাগপুর থেকে সুন্দর জীবনের টোপ ফেলে সরল মানুষগুলিকে অসম, ডুয়ার্সের চা বাগানে টেনে এনেছে। মেটে ঘর, খড়ো চালের বস্তিতে বাস। বিষাক্ত সাপ, পোকামাকড়, ম্যালেরিয়া, ভয়ংকর বর্ষা ও শীতের মধ্যে উপরি পাওনা ব্রিটিশের শাস্তি—চাবুক বা কারাবাস। তারই মধ্যে চাঁদনি রাতে মাদল বেজে ওঠে। বাঙালিরা দুর্গোৎসব করে। প্রভুর জাত মনে করে ব্রিটিশরা নিজেদের আলাদা ক্লাব বানিয়ে মদ্যপান করে।উপন্যাসের চরিত্রায়ণের মধ্যে ফুটে উঠেছে তদানীন্তন চা বাগানের সমাজ ও অর্থনীতির চিত্র। পীড়কের হুঙ্কার ও পীড়িতের আর্তনাদ। তার সঙ্গে মিশেছে হাতি, বাইসন, চিতা ও হরিণের অসহায়তা, ময়ূর ও ধনেশের ভয়ার্ত দিনলিপি।