আব্বাস কিয়ারোস্তামি। আর্টের একজন বিশ্বনাগরিক। যেখানেই সিনেমার আলো পৌঁছেছে, সেখানেই কিয়ারোস্তামির উপস্থিতি আছে। পার্সিয়ান শিল্পরাজ্যের এই সম্রাটকে কেবল ইরান-ই ধারণ করে না, ধারণ করে শিল্প-সাহিত্যের সমগ্র জগৎটাই। দুনিয়াব্যাপী প্রভাববিস্তারকারী চিত্রনির্মাতাদের মধ্যে কিয়ারোস্তামি অগ্রগণ্য। এই মায়েস্ত্রো জন্মেছিলেন ১৯৪০ সালের ২৪ জুন, তেহরানে। পৃথিবীর আলো-বাতাস ছেড়েছেন প্যারিসে, ২০১৬-এর ৪ জুলাই। চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন তেহরানের লাভাসানে। ৭৬ বছরের জীবনে বহুমাত্রিক কর্ম-প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে পেইন্টিং ও গ্রাফিক্স ডিজাইনের ছাত্র থাকাকালে পড়াশোনার খরচ জোগাতে তিনি ট্রাফিক পুলিশের চাকরি করেছেন, এরপর কাজ করেছেন ফাইন আর্টসের নানা মাধ্যমে। ষাটের দশকের পুরোটাই নিজেকে বিজ্ঞাপন জগতের একজন হিসাবে নিবেদিত রেখেছিলেন। টেলিভিশনের জন্য শত-শত বিজ্ঞাপনচিত্র বানিয়েছেন। ছবি আঁকা, গ্রাফিক্সের কাজ, ফটোগ্রাফি, ইন্সটলেশন, বিজ্ঞাপনের কাজ করতে করতেই সিনেমা নির্মাণে এসেছেন। ছোটো- বড়ো ফিচার ফিল্ম আর প্রামাণ্যচিত্র মিলিয়ে নিজে ৪৮টি ছবি বানিয়েছেন। অন্য পরিচালকদের জন্যে লেখা চিত্রনাট্যের সংখ্যাও কম নয়। ইরানের ল্যান্ডস্কেপ আর মানুষের জীবনাচার বুঝতে নির্দ্বিধায় আব্বাস কিয়ারোস্তামির সিনেমাগুলির কাছে যাওয়া যায়। কোকার ট্রিলজি: হোয়ার ইজ মাই ফ্রেন্ড'স হোম (১৯৮৭), লাইফ অ্যান্ড নাথিং মোর/অ্যান্ড লাইফ গোজ অন (১৯৯২), থ্রু দ্য অলিভ ট্রিজ (১৯৯৪); ক্লোজ আপ (১৯৯০), টেস্ট অব চেরি (১৯৯৭), দ্য উইন্ড উইল ক্যারি আস (১৯৯৯), টেন (২০০২), শিরিন (২০০৮), সার্টিফাইড কপি (২০১০), লাইক সামওয়ান ইন লভ (২০১২) দুনিয়াব্যাপী দর্শক-সমালোচকের কাছে সমাদৃত কিয়ারোস্তামি-নির্মিত সিনেমা। তাঁর মৃত্যুর পরের বছর মিনিমালিস্ট ঘরানার সিনেমা টুয়েন্টি ফোর ফ্রেমস মুক্তি পায়। টেস্ট অব চেরি ১৯৯৭ কান ফিল্ম ফেস্টিভালের শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার পাম দ'অর জেতে। এর আগে ইরানের কোনো নির্মাতার ছবি কান-এ সেরা হয়নি। কাব্যিক চিত্র-দর্শনের অনন্য কারিগর ছিলেন তিনি। কিয়ারোস্তামির যেকোনো শিল্প-সৃষ্টিতে তীব্র জীবনতৃষ্ণা খুঁজে পাওয়া যায়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দৈনন্দিনতায় জীবনের গভীর বোধ আর বিভিন্ন স্তরের চিন্তাকে জাগিয়ে দেয়।