অদ্বৈত মল্লবর্মণ (১৯১৪-১৯৫১) ॥ জন্ম গোকর্ণ গ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১ জানুয়ারি ১৯১৪। ঔপন্যাসিক। এক দরিদ্র ধীবর পরিবারে জন্ম। শৈশবে পিতৃমাতৃহীন হন। গ্রামের মালোরা চাঁদা তুলে তাঁর পড়ার খরচ চালাতো। ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্নদা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস (১৯৩৩)। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে কিছুদিন আই.এ. ক্লাসে অধ্যয়ন। ১৯৩৪-এ জীবিকার সন্ধানে কলকাতায় গমন। সেখানে মাসিক ‘ত্রিপুরা’ পত্রিকায় শুরু করেন তাঁর সাংবাদিক ও কর্মজীবন। ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রতিষ্ঠিত ‘নবশক্তি’ পত্রিকায় সহ-সম্পাদক পদে যোগদান (১৯৩৬)। এর সম্পাদক কবি প্রেমেন্দ্র মিত্রের সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন। নবশক্তি প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেলে মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁর ‘মাসিক মোহাম্মদী’র সম্পাদকের সহকারী হিসেবে যোগদান। তিন বছর এ পদে দায়িত্ব পালন। এ সময়ে একই সঙ্গে দৈনিক আজাদেও সাংবাদিকতা। নবযুগ, কৃষক ও যুগান্তর পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন। ১৯৪৫-এ সাপ্তাহিক দেশ-এ সম্পাদকের সহকারী পদে নিযুক্ত লাভ। আমৃত্যু এ পদে দায়িত্ব পালন। আয় বাড়াবার জন্য বিশ্বভারতীর প্রকাশনা শাখায় পার্ট টাইম চাকরি গ্রহণ। তাঁর সুবিখ্যাত উপন্যাস তিতাস একটি নদীর নাম প্রথম মাসিক মোহাম্মদীতে প্রকাশিত। কয়েকটি অধ্যায় মুদ্রিত হওয়ার পর এ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি রাস্তায় হারিয়ে যায়। বন্ধুবান্ধব ও পাঠকদের আগ্রহে পুনরায় কাহিনীটি লেখেন। কাঁচড়াপাড়া যক্ষ্মা হাসপাতালে যাওয়ার আগে এই গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি বন্ধুবান্ধবকে দিয়ে যান। লেখকের মৃত্যুর কয়েক বছর পর উপন্যাসটি তিতাস একটি নদীর নাম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত। এই একটি মাত্র উপন্যাস লিখে বাংলা সাহিত্যের স্মরণীয় প্রতিভা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ। অদ্বৈত মল্লবর্মণ তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও সুগভীর অন্তর্দৃষ্টির বলে এতে ধীবর সমাজের জীবনসংগ্রামের কাহিনীকে দিয়েছেন অবিনশ্বরতা। তাঁর গ্রন্থপ্রীতি ছিল অসাধারণ। নিদারুণ অর্থকষ্টের মধ্যেও বই কিনেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর বন্ধুরা রামমোহন লাইব্রেরির হাতে তাঁর গ্রন্থভাণ্ডার তুলে দেন। সাহিত্য, দর্শন ও চারুকলা বিষয়ক এমন সুচিন্তিত ও সুনির্বাচিত সংগ্রহ দুর্লভ। লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ এই সহস্রাধিক গ্রন্থ সংগ্রহকে একটি পৃথক বিভাগে রক্ষা করেছেন। মৃত্যু. ষষ্ঠীপাড়া, কলকাতা, যক্ষ্মায়, ১৬ এপ্রিল ১৯৫১।